প্রকাশিত: Wed, Jan 4, 2023 4:17 PM
আপডেট: Sun, Jun 29, 2025 10:53 AM

আন্দোলনের মঞ্চে কেন আওয়ামী লীগ?

পলাশ রহমান

ইসলামি আন্দোলন ঢাকায় তাদের জাতীয় সম্মেলন করেছে। সারাদেশ থেকে হাজার হাজার দলীয় প্রতিনিধি জড়ো হয়েছিলেন সেখানে। বেশ গোছালো, ছিমছাম অনুষ্ঠান করেছে দলটি। বরাবরের মতো তারা কৌশলী কথাবার্তা দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেছেন। সরকারের বন্ধুও না, কড়া সমালোচকও না। বিরোধী দলের সাথে একাত্বও না, আবার সরকারের পক্ষেও না। অনেকটা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র মতো। আমি ভেবেছিলাম দলটি সরাসরি বিরোধী দলের যুগপৎ আন্দোলনে না গেলেও চলমান আন্দোলনের প্রতি সমর্থনের একটা ইঙ্গিত দেবে। সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানাবে। কিন্তু তারা তা করেননি। বরং পরিষ্কার বলেছেন, রাষ্ট্র মেরামতের দায়িত্ব তারা এমন কারো হাতে তুলে দিতে চান না, যারা অতীতে রাষ্ট্রকে শোষণ করেছে।

বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে তাদের এই বক্তব্যের ইঙ্গিত ছিলো বিএনপির দিকে। আমার প্রশ্ন হলো, অতীতে যারা রাষ্ট্র ভালো চালায়নি তাদের হাতে ক্ষমতা দিতে চান না ভালো কথা, তাহলে কী হবে? যেভাবে চলছে সেভাবেই চলবে? অর্থাৎ আওয়ামী লীগ যেভাবে দেশ চালাচ্ছে সেভাবেই চলবে? যদি তাই হয়, তবে কেন ফেয়ার নির্বাচনের দাবি করেন? কেন নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি জানান? কেন নাগরিক অধিকারের কথা বলেন? 

ফেয়ার নির্বাচন হলে কী হবে? আপনারা ক্ষমতায় যাবেন? তা যে যাবেন না, আপনারাও জানেন। তাহলে আপনাদের অবস্থান কী? আপনাদের এই অবস্থানের কারণে সরকার বেশি লাভবান হচ্ছে। আর এই সরকার যতোদিন ক্ষমতায় থাকবে দেশ ও জাতি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, হচ্ছে। এর দায় কিছুটা হলেও কি আপনাদের কাঁধে গিয়ে পড়ে না? এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা হচ্ছিলো আন্দোলনের একজন প্রথম সারির নেতার সাথে। তিনি বললেন, ‘আমরা বুঝতে পারি না আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতে হলে কেন বিএনপিকে সমর্থন করতে হবে? আমরা দেশের প্রধান দুই দলের কাউকে দেশের জন্য নিরাপদ মনে করি না। সো নিজেদের মতো করে চেষ্টা করছি। এতে সমস্যা কী? আমরা চাই না আমাদের আন্দোলনের ফসল অন্য কেউ ঘরে তুলুক। আমাদের সমর্থন নিয়ে অন্য কেউ ক্ষমতায় গিয়ে জাতিকে শোষণ করুক’।

নেতা বলেন, আমরা সরকারের সাথে গায়ের জোর দেখাতে যাই না, এর অর্থ এটা নয় যে আমরা সরকারের সমর্থক বা সহযোগী। আমরা আমাদের শক্তি সামর্থ্য সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণ রাখি। আমরা বেশি জোর খাটাতে গেলে সরকার জামায়াতের মতো আমাদের উপরও ক্রাকডাউন চালাবে। যা মোকাবেলা করার মতো সাংগঠনিক পর্যায়ে আমরা এখনো যাইনি। তাছাড়া ইসলামি আন্দোলন চরমপন্থাকে সমর্থন করে না। আমরা বরং চূড়ান্তপন্থার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। আমরা জানি একদিন এমন সময় আসবে আওয়ামী লীগ বিএনপি এক হয়ে আমাদের বিরোধিতা করবে। আমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়বে। এখন অযথা শক্তি ক্ষয় না করে আমরা সেই চূড়ান্ত বিরোধিতা মোকাবেলার রাজনৈতিক প্রস্তুতি নিচ্ছি’।

ইসলামি আন্দোলনের মাদার অর্গানাইজেশন হলো ‘বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি’। এটি একটি শতভাগ আধ্যাতিক সংগঠন। যারা আন্দোলনের নেতাকর্মী, মোটা দাগে তারাই মুজাহিদ কমিটির সদস্য। হয়তো এই কারণে আন্দোলনের নেতাকর্মীরা যে একটি রাজনৈতিক ফোর্স তা তারা সব জায়গায় সফলভাবে তুলে ধরতে পারে না। কিছুটা কনফিউজড থাকে। আন্দোলন তাদের নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে। আমির, মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় বিশেষ কোনো পরিবর্তন আসেনি। অর্থাৎ তারাও আওয়ামী লীগের মতো পুরনো কমিটির উপরই ভরসা করছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশেষ কোনো চমক তাদের হাতে নেই। সম্মেলনে বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ অনেক দলকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। তারা এসেছিলেন। শুনেছি জামায়াতকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। কিন্তু কেন? জামায়াত কি নিষিদ্ধ দল? জামায়াত কি আওয়ামী লীগ বা বাম দলগুলো থেকেও খারাপ?

আমি মনে করি, জামায়াতকে দাওয়াত না দেওয়ার পক্ষে একটিই যুক্তি থাকতে পারে, তারা স্বাধীনতার সময়ে দলীয়ভাবে বিরোধিতা করেছিলো। যদি তাই হয়, তবে মুসলিম লীগ দাওয়াত পায় কী করে? স্বাধীনতাবিরোধী বামরা দাওয়াত পায় কী করে? বরং আওয়ামী লীগকে দাওয়াত দেওয়া উচিত হয়নি। আওয়ামী লীগ গত ১৪ বছর যাবৎ জাতিকে শোষণ করছে। মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা গণদুশমনের পরিণত হয়েছে। দেশের সকল রাজনৈতিক দলের উচিত, তাদের বয়কট করা। তারা যতো সময় অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকবে ততো সময় তাদের সাথে কোনো রাজনৈতিক শিষ্টাচার নেই। তাদের দাওয়াত না দেওয়াও সরকারবিরোধী আন্দোলনের একটা ভাষা হওয়া উচিত।

কিন্তু ইসলামি আন্দোলন তো তা করেইনি, বরং আওয়ামী লীগের একজন মন্ত্রীকে পেয়ে তাদের বেশ হাস্যেজ্জ্বল দেখা গেছে। গদগদ মনে হয়েছে। যা রাজনীতির চোখে দেখতে ভালো লাগেনি। আন্দোলনের আমির সৈয়দ রেজাউল করীমের বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, এতবড় একটা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছেন অথচ একটুও হোমওয়ার্ক করেননি। তাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য দলের নেতাদের তিনি ধন্যবাদ জানালেন নাকি ‘ধমক’ দিলেন ঠিক বোঝা গেলো না! যেখানে গলা চড়ানোর কথা সেখানে নরম সুর, আর যেখানে গলা মোলায়েম হওয়ার কথা সেখানে ‘ছয় আলিফ’! কে যে উনাকে বলেছেন, রাজনৈতিক বক্তব্য চিল্লাপাল্লা করে দিতে হয়। নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করীম গতানুগতিক জাতিকে ইতিহাস শুনিয়েছেন। বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস। আমার মনে হয়, তার এই ইতিহাস বর্ণনা তার দলের একদম শেষ মাথার কর্মিটিও কয়েক হাজার বার শুনেছে। শুনতে শুনতে তাদের কান পচে গেছে। ফেসবুক থেকে